সমাজে সকল স্তরে নারী-পুরুষের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক   | ১০ মার্চ, ২০১৯ ১৭:৪০

সমাজের সকল স্তরে নারী-পুরুষের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন দেশ-বিদেশী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা নারীর প্রতি সকল সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীর সমনাগরিকত্ব ও অর্থনেতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ছায়ানট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই দাবি জানানো হয়। উন্নয়ন সংস্থা ‘ইউবিআর বাংলাদেশ এলায়েন্স’ ‘হ্যালো আই এ্যাম’ কনসোর্টিয়াম ও ‘আরএইচআরএন প্লাটফরম’-এর যৌথ উদ্যোগে কবিতা, নাটক ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়েইজ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. অসা টর্কেলসন। আলোচনায় অংশ নেন দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ, আরএইচস্টেপ’র নির্বাহী পরিচালক কাজী সুরাইয়া সুলতানা, বন্ধুর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমদ ও উন্নয়নকর্মী উম্মে হাবিবা।

অনুষ্ঠানের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বলেন, সঠিক নীতি গ্রহণের কারণে নারীর উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বে, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীরা আর পিছিয়ে নেই। এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হচ্ছে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি হ্যারি ভারওয়েজ বলেন, নারী ও মেয়ে শিশুদের লিঙ্গ সমতা অর্জনে সরকার আন্তরিক। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত নেদারল্যান্ডস সরকার সবসময় পাশে থাকবে বলে তিনি প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেন।

ড. অসা টর্কেলসন বলেন, যেকোনো জাতির জেন্ডার সমতা অর্জনের মূল বিষয় নারীর ক্ষমতায়ন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের জন্য জেন্ডার সমতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় আমরা নারীদের কেবল বিনা পারিশ্রমিকের গৃহকর্ম, পরিবার সদস্যদের সেবা ও সন্তান উৎপাদনেই বেশি ব্যস্ত রাখি। এর বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে নানান বাধার সৃষ্টি করা হয়। সামাজিকভাবে নারীদের সমান হয়ে ওঠার অনুকূল সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো’-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আদিবাসী দল মাদল-এর ঢোল বাজনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ‘আমি সেই মেয়ে’ কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আফরোজা বানু। এরপর কিশোর-কিশোরী ও যুবদের অংশগ্রহণে নারীর জীবনচক্র নিয়ে নাটিকা ‘চক্রভঙ্গ’ মঞ্চস্থ করা হয়। আলোচনা সভা শেষে সংগীত শিল্পী সায়ান গান পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিলো ‘সত্ত্বা’ নামক হিজড়া সম্প্রদায়ের দলীয় নৃত্য পরিবেশনা।

News Link | Pdf Link