কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সুশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সংসদ সদস্যসহ পরিবার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বেশী। তাই শিক্ষকদের পাশাপাশি অবিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠিত ‘কিশোর কিশোরী ও যুবদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে শিক্ষার গুরুত্ব’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এ আহ্বান জানান। সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)’র সিনিয়র স্পেসালিস্ট প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)’র উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী, সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফাতেমা জোহরা, পার্লামেন্টনিউজবিডি.কম সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, পরিবার পরিকল্পনা সমিতির জেলা কর্মকর্তা অরুন কুমার শীল, ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ ম-ল, নাগরিক নেতা আনিসুর রহিম, উন্নয়নকর্মী নাজমুল আজম ডেভিট, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতারা শিলু, সাংবাদিক সুকুমার দাস বাচ্চু প্রমূখ। মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল।
সংলাপে সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়ে শিক্ষক ও অবিভাবকদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মানুষের জড়তা ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষক ও অবিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নিজের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরে সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, নারীর সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রযোজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি নাগরকিদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। কৈশরকালে সন্তানদের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, সরকারের সেবা যাতে জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌছায়, সেজন্য সরকারী সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। জ¦র, সর্দ্দি ও কাশির মতো নারীদের মাসিক (পিরিয়ড) যে স্বাভাবিক বিষয় সেটা সকলকে অনুধাবন করতে হবে।
কিশোর-কিশোরীদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষা কারিকুলামের আধুনিকায়ন ও পাঠদানে শিক্ষককের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান কাজী মহিউল ইসলাম। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সমাজের পশ্চাৎপদ ধারণার পরিবর্তন করতে হবে। জরুরী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, এনসিটিবির কারিকুলামে মাসিকের বিষয়গুলো আছে। শিক্ষকদের এ ব্যাপারে ওরিয়েন্টেশনও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দূর্বলতাগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন কারিকুলামে মাসিক সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে রাখা হয়েছে।
সংলাপে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, স্কুলে ও স্কুল পাঠ্যক্রমের বাইরে সমন্বিত যৌন শিক্ষার (সিএসই) মৌলিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে বিস্তৃত স্বাস্থ্য ও জীবন দক্ষতা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সিএসই সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটিতে সমন্বিত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জীবন দক্ষতা শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাঠ্যক্রমটি শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী ও প্রমাণ ভিত্তিক তথ্য সম্বলিত করে সাজাতে হবে এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকদ্বারা তথ্য সরবরাহ করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে পাঠ্যপুস্তকের বয়ঃসন্ধিকাল প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যায়টি এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে সচেতনতার জন্য অভিভাবকদের নিয়ে সভা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিশোরীদের জন্য হাইজিন কর্ণার চালু করতে হবে। সর্বোপরি জিও-এনজিও অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।