দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ওই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লির্ডাস আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশে তারা এ আহ্বান জানিয়েছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় ৯ দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সমাবেশে বক্তৃতা করেন তেল-গাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মিহির বিশ্বাস, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল, কেএনএইচ জার্মানির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মুকুল, স্ক্যান সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন প্রমুখ।
সমাবেশে উত্থাপিত ৯ দফায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করতে হবে। পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারসহ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উপকূলীয় সব মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। দুর্যোগপ্রবণ উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের জানমাল সুরক্ষায় কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে। ঝড়-ঝঞ্ঝা ও ভূমিক্ষয় রোধে উপকূল, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি ও সুপার সাইক্লোন আম্পান এই সংকট আরও বাড়িয়ে নিয়েছে। আম্পানের ছয় মাস পার হলেও জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। তাই এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানিতে উৎপাদিত চিংড়ি রফতানি করে সরকার প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু ওই সব এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য লবণপানি উত্তোলনের কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণে এখনও যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।