তীব্র খাবার পানির সংকট দূরকল্পে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ, সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চল, বৈকারি ইউনিয়নে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উদ্ভাবনী মডেলের মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য একটি পানি বিশুদ্ধিকরণ প্লান্ট স্থাপন করেছে।

এইচটুও, সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের একটি প্রকল্প, যার মাধ্যমে সম্প্রতি সাতক্ষীরার বৈকারি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নিরাপদ খাবার পানির প্লান্ট এবং হাইজিন কর্নার উদ্বোধন করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির। তার পাশাপাশি উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সুইসকন্টাক্টের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রধান এলিয়ান হারম্যান। এছাড়াও এইচটুও প্রকল্পের দাতা প্রতিষ্ঠান লোকালেস ওয়াসার ৩৭, (একটি সুইস মিনারেল পানির কোম্পানি) এর প্রতিষ্ঠাতা ড. উরস গ্রাটার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নিরাপদ খাবার পানির সংকট সময়ের সঙ্গে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নিরাপদ খাবার পানির অভাব নিরুপনের লক্ষ্যে ২০২২ সালে সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ ‘বৈকারি স্কুল ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড হাইজিন কর্নার‘ নামক একটি উদ্ভাবনী স্কুল-ভিত্তিক মডেল বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। এ মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নিরাপদ খাবার পানির সংকট কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এ উদ্ভাবনী মডেলটি জলবায়ুগত পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে পানি বিশুদ্ধিকরণ এবং প্ল্যান্টটির সার্বিক পরিচালনার জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং সৌর শক্তির মতো নবায়নযোগ্য সংস্থান ব্যবহার করেছে, যা কিনা ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপ এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে অবদান রাখবে।

স্কুলের সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দের জন্য স্কুল চলাকালীন সময়ে বিনামূল্যে নিরাপদ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে উক্ত পানির প্ল্যান্ট হতে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একইসাথে একটি স্মার্ট হাইজিন কর্নারের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের জন্য একটি ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয়েছে, যা কিশোরী ছাত্রীদের নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনে উত্সাহিত করবে।

এইচটুও প্রকল্পের টিম লীডার, বিপাশা এস হোসেন, উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সকল অতিথিদের স্বাগত জানান এবং এইচটুও প্রকল্পের টেকসই ওয়াটার এন্টারপ্রাইজ মডেল সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবগত করেন। এই উদ্যোগের প্রশংসা করে, সাতক্ষীরা জেলার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে আমাদের অবশ্যই উদ্ভাবন চালিয়ে যেতে হবে, যার একটি অন্যতম উদাহরণ হল সাতক্ষীরায় তীব্র পানি সংকট নিরূপণে বৈকারি স্কুলের স্থাপিত এ পানির প্লান্ট। এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।” এরই ধারাবাহিকতায় এইচটুও প্রকল্পের দাতা ড. উরস গ্রাটার, সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, “যদি আমরা সবাই একইসাথে একই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করি, তবে আমরা অভিনব সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগ চালিয়ে আরও উদ্ভাবনী সমাধান প্রবর্তন করতে পারবো।”

এইচটুও প্রকল্পটি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় কমিউনিটির সহমালিকানায় আরোও একটি উদ্ভাবনী মডেলের মাধ্যমে নিরাপদ খাবার পানির প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন, এবং সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য এসডিজি লক্ষ্যে অবদান রাখার পাশাপাশি এই প্রকল্পটি সাতক্ষীরার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। প্রকল্পের আওতায় এ দুটি ভিন্নধর্মী মডেল সঠিকভাবে পরীক্ষিত হলে ভবিষ্যতে দেশ ও বিদেশে উক্ত মডেল এর প্রতিরূপ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন সম্ভব হবে, যা বৈশ্বিক নিরাপদ খাবার পানির সংকট মোকাবেলায়য় টেকসই সমাধান হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পের টিম লীডার আরো বলেন, “এইচটুও প্রকল্পটি প্রত্যেকের টেকসই নিরাপদ খাবার পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করার জন্য বদ্ধপরিকর।” –বিজ্ঞপ্তি

News Link: Click Here