স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে ওই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। একইসঙ্গে তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় ৯ দফা দাবি তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে তারা এ দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি ও সুপার সাইক্লোন আম্ফান এই সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আম্ফানের পর ছয় মাস পার হলেও জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। তাই এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানিতে উৎপাদিত চিংড়ি রফতানি করে সরকার প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু ওইসব এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য লবণপানি উত্তোলনের কারণে সুপেয় পানির দীর্ঘমেয়াদি যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট উত্তরণে এখনো যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠরের আহ্বান জানান তারা।
সমাবেশে উত্থাপিত ৯ দফায় বলা হয়— জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়ি বাঁধ পুনঃনির্মাণ করতে হবে; পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারসহ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে; উপকূলীয় সব মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান করতে হবে; জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে; দুর্যোগপ্রবণ উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের জানমাল সুরক্ষায় কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করতে হবে; গণসচেতনতা বাড়াতে বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম শুরু করতে হবে; ঝড়-ঝঞ্ঝা ও ভূমিক্ষয় রোধে উপকূল, দ্বীপ ও চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে; এবং একইসঙ্গে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মিহির বিশ্বাস, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, কে এন এইচ জার্মানির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মুকুল, স্ক্যান সভাপতি জাহাঙ্গীর নাকির, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন, সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ ও পলাশ আহসান, খানির সামিউল ইসলাম শোভন, লিডার্সের পরিতোষ কুমার বৈদ্য, ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, উন্নয়নকর্মী লোকেশ ঘোষসহ অন্যরা।