‘উপকূলে টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনারে পরিবেশ ও নাগরিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বলেছেন, দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে জান-মাল রক্ষায় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপকূলীয় এলাকায় দ্রুত টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে। বেড়ি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটারিং জোরদার করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সূচনা বক্তব্য তুলে ধরেন বেসরকারি সংস্থা লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল।
বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, দাতা সংস্থা কেএনএইচ-জার্মানির কর্মসূচি সমন্বয়কারী মনিরুজ্জামান মুকুল, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, বিএমএর দপ্তর সম্পাদক প্রফেসর ডা. শেখ মো. শহিদুল্লাহ, একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, প্রকৌশলীদের নেতা ইজ্ঞিনিয়ার প্রেম কুমার মণ্ডল, সাতক্ষীরার নাগরিক নেতা আবুল কালাম আজাদ, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার, মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. নূর আলম, পরিবেশ সুক্ষায় উপকূলীয় জোট খুলনার সদস্যসচিব ইকবাল হোসেন বিপ্লব, ভোলার সাংবাদিক নেতা অমিতাভ অপু, ঢাকার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ মুয়াজ, বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠনের জান্নাতুল মাওয়া, ফেইথ ইন অ্যাকশনের নৃপেণ বৈদ্য, জলবায়ু আন্দোলনের নেতা শাহীন বিল্লাহ প্রমুখ।
সেমিনারে মূল বক্তব্যে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, যার নিচে ১০০ ফুট, ওপরে ৩০ ফুট এবং যার উচ্চতা হবে ৩০ ফুট। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ওয়াপদা বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি বা কাঁকড়ার ঘের তৈরিতে সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি উপকূলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিনিধিরা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে বেড়ি বাঁধের ওপর। বাঁধের ক্ষতি হলে তাদের সব কিছু ভেসে যায়। বাড়িঘর নষ্ট ও ফসলের ক্ষতি হয়। তাই ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে জরুরি খাবার না দিয়ে, বাঁধটা শক্ত করে বানিয়ে দেওয়ার দাবিটাই প্রধান। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর এই দাবি আরো জোরদার হয়েছে। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি চলছে। ইতিমধ্যে সরকার জনগণের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বাঁধ নির্মাণে একাধিক প্রকল্প প্রণয়ন করেছে।
তাঁরা আরো বলেন, জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ নির্মাণের পর বাঁধের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ ও বাঁধের দুপাশে বনায়ন করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় সরকার ও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
News Link: kalerkantho.com