আইনপ্রণেতা ও নাগরিক প্রতিনিধিরা এক বিশেষ কনভেনশনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে বলেছেন, টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে উপকূলীয় এলাকার জীবন-জীবিকা। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন উপকূলে পৌছালেও তা জোয়ারের পানিতে ভাসছে। তাই এ বিষয়ে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
গত রোববার (২৭ জুন) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ফেইথ ইন একশন ও লিডার্স এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত ওই কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় কনভেনশনে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, আব্দুস সালাম মূর্শেদী, মো. আমিরুল আলম মিলন, এস এম শাহজাদা, সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। এছাড়া কনভেনশনে ভাচুয়ালী যুক্ত হন সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি ও ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।
কনভেনশনে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, আন্তর্জাতিক সংস্থা কেএনএইচ জার্মানির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মুকুল, একাত্তর টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান, ফেইথ ইন একশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন খান, কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোস্তফা কামাল আকন্দ, ইউনাইটেড পারপাসের মাসুদ রানা, পার্লামেন্টনিউজ সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা প্রমূখ।
কনভেনশনে ৭ দফা প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া সারাদেশের ন্যায় উপকূলীয় এলাকায় পৌছালেও টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে তা আজ ঝুঁকির মুখে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে। জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে উপকূলীয় এলাকার জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চলকে দূর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করে সেখানকার জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়, লবণাক্ততার আগ্রাসনের শিকার উপকূলের সুপেয় পানির সংকট নিরসনে স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মৎস্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। বিশ^ঐতিহ্য সুন্দরবর সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সুন্দরবন ও আশপাশের ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের প্রসারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের ডেল্টাপ্লান বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সাতক্ষীরা থেকে বরিশাল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ করতে হবে। সর্বোপরি উপকূলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে হাওড় উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে।
কনভেনশনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সুন্দরবনের পাশর্^বর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জনজীবনে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর করোনা পরিস্থিতি এবং সুপার সাইক্লোন আম্ফান ও ইয়াসের আঘাত সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বরং টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানির অভাবে জনগণ দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ ও বস্তবায়ন করতে হবে।
News Link: sangbad.net.bd