জীবিকা, খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে ‘খাদ্য অধিকার আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এবং খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি) আয়োজিত নদীর উপর নৌ-বন্ধন ও আলোচনা সভায় এই দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘খাদ্য অধিকার প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। ক্ষুধা, দারিদ্রতা, পুস্টিহীনতার সাথে খাদ্য অধিকার ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
খাদ্য অধিকার কোন দাতব্য বিষয় নয়, বরং প্রত্যেক মানুষ নিজেদের খাদ্যের সংস্থান করবে সেটাই খাদ্য অধিকারের লক্ষ্য। সংবিধানে খাদ্যকে জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও ২০২০ সালের বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে ৮৪তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্মে অবস্থান করছে।
আরো বলেন, দেশের সংবিধানে সব মানুষের জন্য অন্ন, বন্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও অপুষ্টির শিকার ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ তা পাচ্ছে না। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী দেশের আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। ৪৪ শতাংশ নারী ভুগছে রক্তস্বল্পতায়। প্রকৃত উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে এ পরিস্থিতি বদলাতে হবে। সে জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রনয়ণের উদ্যোগ অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। শুধুমাত্র সঠিক পুষ্টির অভাবে দেশের ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ হয় না। বিশ্বের ৮১১ মিলিয়ন মানুষ প্রতি রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়, তারপরও উৎপাদিত খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার নষ্ট হচ্ছে। তাই দেশের সকল মানুষের জীবিকা, সংস্কৃতিভেদে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য এখনই জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থার ভলেন্টারি নির্দেশিকার আলোকে দেশে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা জরুরি। এই আইন প্রণীত হলে সকল মানুষের খাদ্য ক্রয়ের জন্য আয়, খাদ্যের যোগান এবং সংস্কৃতিভেদে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের আইনী বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী ২০২৬ সালে খাদ্য অধিকার বিষয়ক আইন প্রণয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো থেকে এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
দেশের সকল নাগরিকের জন্য জীবিকার নিশ্চয়তা, খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আফাজ উদ্দিন তরফদার। আলোচনায় অংশ নেন লিডার্সের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস. এম. মনোয়ার হোসেন, মনিটরিং অফিসার রনজিৎ কুমার মন্ডল, ভুক্তভোগী মাছুদুল তরফদার, বাঘ বিধবা রিজিয়া খাতুন, ভুক্তভোগী ইলিয়াস সানা, বাঘ বিধবা শাহিদা খাতুন প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, সরকার বনজীবিদের বনে প্রবেশের উপর বিধি নিশেধ আরোপ করায় জীবিকার সংকট তৈরি হয়েছে। উপকূলে বার বার বেড়িবাঁধ ভাঙনের কারনে খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীরা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন তারা।